বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫০ অপরাহ্ন
কাজী সোহেল, দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি : দোহার ও নবাবগঞ্জ, ২০১৪ সালে ঢাকা-১ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি নির্বাচিত হন। এরপরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সালমা ইসলামকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালমান এফ রহমান। সেই হিসেবে এই আসনের এমপির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগের নৌকা মনোনীত প্রার্থী সালমান এফ রহমান। অপরদিকে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে ভোটারদের ধারে ধারে ছুটছেন সাবেক এমপি সালমা ইসলাম।
ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে নানা কারণে সবচেয়ে ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত এই ঢাকা-১ আসনটি। তাই এই আসনের এমপি হওয়া যেন সোনার হরিণ। এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বদ্ধিতা হবে বলে ধারণা করছেন এই আসনের ভোটাররা।
ঢাকা-১ আসনটিতে মোট ৭জন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বদ্ধিতা বা হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও জাতী পার্টির মনোনীত দুই প্রার্থীর সাথে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতীক বরাদ্দের পরপর থেকেই দোহার ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন আনাচে কানাচে চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী কর্মি সমর্থকরা। সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন যদি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে এই আসনে নৌকা ও লাঙ্গল মার্কার মধ্যেই ভোটের মাঠে লড়াই হবে হাড্ডা-হাড্ডি। তবে শেষ পর্যন্ত ফলাফল কি হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষারত দোহার ও নবাবগঞ্জের এলাকবাসীসহ ঢাকা জেলার অন্যান্য সকল আসনের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। তবে অনেকেই আবার বলছেন ভোট যাকেই দেই না কেন নৌকাই পাস করবে।
অন্য প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কমরেড মো. করম আলী, মুক্তিজোটের আব্দুর রহিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আব্দুল হাকিম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির সামসুজ্জামান চৌধুরী, গণফ্রন্টের শেখ মো. আলী, তৃণমূল বিএনপির মুফিদ খান ও জাকের পার্টির লুৎফর রহমান খান। তবে প্রতীক বরাদ্দের দিন জাকের পার্টির লুৎফর রহমান খান ও মুক্তিজোটের আব্দুর রহিম তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।
এই আসনে হেভিওয়েট সম্পন্ন দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্ধারিত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন জনসংযুগ, উঠান বৈঠক আর সমাবেশ। কে কার থেকে বেশি কৌশল প্রয়োগ করে নিজের অবস্থান জোরদার করবেন এ নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। আর এ কৌশল প্রয়োগ করেই ভোট ব্যাংকের বাইরে থাকা ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা চলছে। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসছে বিভিন্ন সমীকরণ। ছোট-বড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনের সমর্থন এবং প্রশাসনিক লোকজনের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে নানামুখী সমীকরণ আলোচনায় আসছে। প্রার্থীদের মধ্যে কার পাল্লা ভারি তাও নিয়েও আলোচনা হচ্ছে স্থানীয় বাজার গুলোর চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন জায়গায়। নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দোহার ও নবাবগঞ্জের এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত পর্যন্ত গণসংযোগ করার পাশাপাশি পল্টাপাল্টি বক্তব্যও রাখছেন বিভিন্ন সমাবেশ, পথসভা ও উঠান বৈঠকে। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে শোডাউন করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামলেও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যের চেয়ে অপ্রকাশ্যে বেশি কাজ করছেন। তবে এটি দলটির একটি কৌশল বলে জানা যায়।
এলাকাবাসী জানান, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এই দুই দলের মধ্যেই মূলত লড়াই হবে ভোটের মাঠে। তবে সুমীকরণে আওয়ামী লীগ এগিয়ে রয়েছে বর্তমানে। আর এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকা-১ এই আসনে ক্ষমতায় রয়েছেন। তাই এই দোহার ও নবাবগঞ্জ দুই উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ, রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রসায় ব্যাপক ভাবে উন্নয়ন হয়েছে। এরই জন্য এবারও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালমান এফ রহমানকে নৌকা মার্কায় ভোট দিবে জনগণ।
এবিষয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত শিল্প ও উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা জননেতা সালমান এফ রহমান এমপি হওয়ার পর থেকেই এই আসনটিতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দোহার ও নবাবগঞ্জ ঢাকা-১ এই আসনে। তিনি বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পের অনুমোদন, পদ্মায় বাঁধ নির্মাণ, রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল কলেজ, মাদ্র্রসার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। এই আসনের দুইটি উপজেলায় আমরা বিগত দিনে সফল ভাবে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পুর্ণাজ্ঞ কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছি।
এই আসনে জনগণের আস্থাভাজন ও ভালোবাসার অপর নাম সালমান এফ রহমান। আগামী নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। কারণ তিনি জনগণের জন্য কাজ করেছেন, তিনি উন্নয়নের কাজ করেছেন। সুতরাং তিনি আবার দ্বিতৃীয় বারের মত এই আসন থেকে ব্যাপক পরিমান মানুষের ভালোবাসা পেয়ে আবারও নির্বাচিত হবেন।
এবিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৫ বছর যাবত ক্ষমতায় ছিলো বলেই দেশে অনেক বড় বড় অবকাঠামোর উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এখন সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ আছে। যা অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই। এ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের উন্নয়নে কাজ করে। আমি বিগত দিনে আমার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপকভাবে উন্নয়নে কাজ করেছি। তাই জনগণ আমাকে ভালবেসে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে আমাকে নির্বাচিত করবেন। সবার দাবি এলাকায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া সেটা খুব দ্রুতই শুরু হয়ে যাবে।
অপরদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামও খুব সহজে ভোটের মাঠে ছাড় দেবেন না। কারণ তিনিও এর আগে এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। সে সময় তিনিও দোহার ও নবাবগঞ্জ এই দুই উপজেলায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তাই তারও জানা রয়েছে সকল সমীকরণ। পাশাপাশি তিনি অনেক গরীব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক ভাবে অনেক সহযোগিতা করেছেন। তিনিও লড়ে যাবেন ভোটের মাঠে তার হারিয়ে যাওয়া এই আসনটি পূনরোদ্ধারের জন্য।
নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. জুয়েল আহমেদ বলেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা-১ এই আসনে একশত ভাগ প্রস্তুত জাতীয় পার্টি। ইতোমধ্যেই দোহার ও নবাবগঞ্জ এই দুইটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আমরা সফল ভাবে আমাদের কমিটি গঠন করে দলকে শক্তিশালী করেছি। বিগত দিনে আমাদের নেত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময় তিনি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অনেক সহযোগিতা করেছেন। দোহার ও নবাবগঞ্জ এই দুই উপজেলায় আমাদের নেত্রী সালমা ইসলাম অনেক উন্নয়ন করছেন। জনগণ আমাদের নেত্রীকে ভালোবাসেন। তাই জনগণ তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে আশা করি। যদি সুষ্ঠ ও নিরোপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে আমাদের জয় সুনিশ্চিত।
এবিষয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, অতীতেও আমি আমার এই দুই উপজেলার উন্নয়নে কাজ করেছি। যদি সুষ্ঠ ও নিরোপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে আমি নির্বাচিত হবো ইনশাআল্লাহ। আর আমি এই নির্বাচনে জয়ী হলে আমার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ শেষ করবো। বিশেষ ভাবে পদ্মার ভাঙনরোধ,স্কুল-কলেজ সরকারিকরণ, গ্যাস সংযোগ প্রদানসহ দোহার-নবাবগঞ্জের সংকট সমাধানের কাজ করে যাবো।